ঢাকা   শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

সংবিধান সংশোধন-পুনর্লিখন প্রসঙ্গে

Daily Inqilab ইয়াছিন তোহা

২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম

গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ডকট্রিন অব ন্যাসেসিটির ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। আমরা মনে করছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলন বিধায় সাংবিধানিক আইনে বৈধতার প্রশ্ন তোলা যাবে না। এটা চরম সত্য কথা। সংবিধান হলো জনতার ইচ্ছার প্রতিফলন সেহেতু জনতার সরকারকে আইনগতভাবে বৈধতা দিতে হয় না। কেননা, আইন জনগণের জন্য, আইনের জন্য জনগণ নয়। গণঅভ্যুত্থানের ফলে দেশের সংবিধান অকার্যকর হয়ে পড়লেও আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিন্তু এই সংবিধানের অধীনেই শপথ গ্রহণ করেছে। যেহেতু সংবিধানের অধীনে শপথ নেয়া হয়েছে, সেহেতু সংবিধান বহাল রয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা ও অবৈধতার প্রশ্ন ততক্ষণ থেকে যাবে যতক্ষণ পর্যন্ত সংবিধান নিয়ে কোনো সুরাহা না হবে। সেজন্য প্রথম দায়িত্ব হলো সংবিধান বিষয়ে যুগোপযোগী সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া, যাতে আগামী দিনে জুলাই আন্দোলনের স্পৃহা স্তিমিত না হয় এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিতর্কিত না হয়ে থাকে।

সংবিধান বিষয়ে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক প্রশ্ন হলো, সংবিধান কি সংশোধন হবে নাকি পুনর্লিখন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই তথা ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিবেচনায় নিতে হবে। আমাদের দেখতে হবে ১৯৭২ সালের সংবিধানে আসলেই জনগণের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে কি-না। এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার আগে আমরা দেশের নাম নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাই। এই যে, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ এর মধ্যে রাজা-প্রজার একটা প্যাঁচগোছ বাঁধিয়ে দেয়া হয়েছে সেটার সমাধান কি? এখানে রাজা কে আর প্রজা কে? রাজা কে তা জানি না তবে জনগণ যে প্রজা এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ আমরা রাখি না। সংবিধানে বলা হয়েছে, জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। প্রশ্ন হচ্ছে, যারা সর্বময় ক্ষমতার উৎস, তারা প্রজা হয় কী করে? এই দোদুল্যমান প্রশ্নের জবাব খোদ সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন দিতে পারবেন কি-না সন্দেহ রয়েছে। যে নাম সরকার ও জনতার মধ্যে রাজা-প্রজা রীতি যুক্ত করে মনঃস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে তার সংশোধন জরুরি নয় কি?

দেশের সকল কাঠামো পরিবর্তনের অঙ্গীকার করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এখন কোনো উপায়ে সে সকল কাঠামো পরিবর্তন হবে তা বড় প্রশ্নের উদ্ভব ঘটিয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাংবিধানিক উপায়ে পরিবর্তন করতে গেলে পুনরায় স্বৈরাচার জন্ম নেবে। আবার সাংবিধানিক উপায় অবলম্বন না করলে কোনো উপায়ে প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন করা হবে? এমতাবস্থায় সবার আগে সংবিধান সংশোধন/পুনর্লিখন করতে হবে। অতঃপর নতুন আঙ্গিকে গড়ে তুলতে হবে রাষ্ট্রের সকল কাঠামো।

সংবিধান পুনর্লিখন না-কি সংশোধন তা নির্ধারণের জন্য বর্তমান সংবিধান ও জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার দিকে নজর দিতে হবে। আমরা যদি আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের বিগত ১৬ বছরের দিকে দৃষ্টি দেই, তাহলে দেখবো ফ্যাসিস্ট সরকার তার সকল অপকর্ম সংবিধান দ্বারা বৈধতা দিয়েছে। সে নিজের প্রয়োজনে তথাকথিত সংসদ ও গৃহপালিত বিচারপতিদের মাধ্যমে সময়ে সময়ে সংবিধান পরিবর্তন করেছে। আমরা বর্তমান সংবিধান দ্বারা শেখ হাসিনাকে কোনোভাবেই স্বৈরাচার বলতে পারি না। শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় ভ্যানগার্ড হলো বর্তমান সংবিধান। যে সংবিধান শেখ হাসিনার মতো খুনী ও ফ্যাসিস্ট জন্ম দেয়, সেই সংবিধান দিয়ে কোনো সভ্য ও কল্যাণ রাষ্ট্র চলতে পারে না।

বর্তমান সংবিধান জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলন থেকে শত যোজন দূরে অবস্থান করায় এবং ১৯৭২ সালের পর থেকে অদ্যাবধি মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন না ঘটায় এই সংবিধান অপ্রয়োজনীয় পুস্তক বলে বিবেচিত হয়। এই সংবিধানের অধীনে যত নির্বাচন সংগঠিত হয়েছে তার সবই বিতর্কে জড়িত। আমরা এমন নির্বাচন দেখি নাই, যেখানে পরাজিত দল বিজয়ী দলকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে। বরং প্রতিটা নির্বাচনের পরই পরাজিত দল বিজয়ী দলকে কারচুপির দায়ে অভিযুক্ত করেছে। যে সংবিধান জনগণের প্রধানতম নাগরিক অধিকার তথা নির্বাচনে পূর্ণ স্বচ্ছতা দিতে পারে নাই সে সংবিধান সংশোধন করে খুব বেশি দূর এগোনোর পথ যে রুদ্ধ হয়ে গেছে তা সহজেই অনুমেয়।

সংবিধান পুনর্লিখন না করে সংশোধনের মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠন সম্ভব বলে বড় একটি মহল আলোচনা করছেন। মহলটির প্রতি সম্মানপূর্বক প্রশ্ন রাখতে চাই যে, সংবিধানের অধীনে শপথ গ্রহণকারী সংসদ এবং সংবিধান রক্ষার অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে সংবিধানের অধীনে শপথ গ্রহণকারী বিচারপতিগণ কি সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা রাখেন? সংবিধান বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান ব্যতিত আদালতের আর কোনো ক্ষমতা রয়েছে কি? সংসদ চাইলেই কি জনআকাক্সক্ষার সংবিধান সংশোধন করতে পারে? সংবিধান দ্বারা সংসদ নিয়ন্ত্রিত না-কি সংবিধান সংসদের মুখাপেক্ষী? সংবিধান অসীম ক্ষমতা দ্বারা সৃষ্ট, তবে সেই অসীমের কাজে হাত দেয়ার ক্ষমতা সসীম সংসদের রয়েছে কি? রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের মতো সংবিধান সংশোধন করলে কিছুদিন পর অন্য দল ক্ষমতায় গেলে সংবিধান পরিবর্তন করবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা কি আছে? যদি নিশ্চয়তা না থাকে তাহলে এমন সংশোধনী গুরুত্ব পায় কি? প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া দুষ্কর। হয়তো কেউ কেউ নানান যুক্তিনির্ভর উত্তর দিতে পারেন কিন্তু আদতে জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতমূলক জবাব আসবে না।

তবুও যুক্তির খাতিরে ধরে নিলাম সংবিধান সংশোধন করেই রাষ্ট্র পুনর্গঠন সম্ভব। তাহলে সংবিধানের দিকে নজর দিতে হয়। বর্তমান সংবিধান কি সংশোধনের কোনো পথ খোলা রেখেছে? না, সংশোধনের কোনো পথ উন্মুক্ত নেই। সংশোধনের সবচেয়ে বড় বাধা হলো অনুচ্ছেদ ৭খ। তাছাড়া সংবিধানে এতোবেশি অসঙ্গতি যে সংশোধন করতে গেলে তিন-পঞ্চমাংশ সংশোধন প্রয়োজন। এতো বেশি সংশোধন করা হলে তখন কি আর তা সংশোধন থাকে?

আমরা যদি শুধুমাত্র সংবিধানের প্রস্তাবনা ও প্রথম ভাগে নজর দেই তাহলে যেসব অসঙ্গতি দেখি তা হলো, প্রস্তাবনার ২য় প্যারায় বলা হয়েছে, ‘আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিলÑ জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে।’ এখানে যেসকল মূলনীতি বীর শহীদদিগকে প্রাণ বিলিয়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিলো বলে উল্লেখ করা হয়েছে তা পুরোপুরি অসত্য, মিথ্যা ও বানোয়াট। তখনকার মানুষ এই নীতি সম্পর্কে কোনরূপ জ্ঞান রাখতো কি-না তাও সন্দিহান। তাছাড়া সেগুলো যদি আসলেই মুক্তিযোদ্ধাদের আদর্শের ভিত্তি হতো তাহলে নিশ্চয়ই তা ৭২ সালে সংবিধানে যুক্ত করা হতো। সংবিধান সংশোধন করে অন্তর্ভুক্ত করা লাগতো না।

অনুচ্ছেদ ২ক. এ রাষ্ট্রধর্ম নির্ধারণ করা হয়েছে আবার অনুচ্ছেদ ৮ ও ১২ তে ধর্মনিরপেক্ষতা জুড়ে দেয়া হয়েছে, যা সাংঘর্ষিক। হয়তো রাষ্ট্রধর্ম থাকবে নয়তো থাকবে ধর্মনিরপেক্ষতা। দুটোতো একত্রে চলতে পারে না। অনুচ্ছেদ ৪ক-তে জাতির পিতার প্রতিকৃতি অফিস-আদালতে ঝুলিয়ে রাখার বিধান অন্তর্ভুক্ত করে জাতির সাথে রীতিমতো তামাশা করা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদ দ্বারা কী তাকে দেবতার সাথে তুলনা করা হয় নাই? এসব অনুচ্ছেদ সংবিধানে স্থান পাওয়া কতটুকু যৌক্তিক? অনুচ্ছেদ ৬ (২) এ বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালী এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন।’ এই অনুচ্ছেদে যে সকল জনগণকে বাঙালি হিসেবে পরিচিত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এই দেশে কি বাঙালি ব্যতিত অন্য কোনো জাতি বসবাস করে না? অন্যান্য জাতি থাকলে তাদের জন্য এই অনুচ্ছেদ কীভাবে বিবেচিত হবে? অনুচ্ছেদ ৭। (১) বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে।’ এই অনুচ্ছেদে জনগণকে সকল ক্ষমতার মালিক বলে ধরা হয়েছে। তার মানে এই সংবিধান সূত্রে জনগণ অসীম ক্ষমতার অধিকারী। অথচ, এই অসীম ক্ষমতার অধিকারী জনগণের ক্ষমতার প্রয়োগকে সংবিধান দ্বারা সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ক পুরোনো আলাপ, সেই কাসুন্দি না ঘাঁটলেও সবারই এটি জানাশোনায় আছে। আর অনুচ্ছেদ ৭খ তো স্বয়ং সংবিধানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশকে সংশোধন করার পথই প্রায় রুদ্ধ করে দিয়েছে। এভাবে ধরে ধরে সংশোধন করতে গেলে দেখা যাবে সংশোধনের নামে সংবিধানের অস্তিত্বই হারিয়ে গেছে। ৭২ সালের সংবিধানে কী আছে? ১৫তম সংশোধনে অন্তত ৫০টি জায়গায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। তাহলে ১৯৭২-এর সংবিধান কোথায়? আমরা যদি পেছনের দিকে যেতে চাই, তাহলে চতুর্থ সংশোধনে গিয়ে ধাক্কা খাব। যেখানে বাকশালের কথা বলা হয়েছে। আমরা ধারাবাহিকভাবে সংবিধান বিশ্লেষণ করলে দেখবো সংবিধানে জনগণকে জিম্মি করে রাখার প্রক্রিয়া সুকৌশলে যুক্ত করে রাখা হয়েছে।

এই সংবিধান সংশোধনের কোনো পথ খোলা আছে বলে মনে হয় না। যেকোনো মূল্যে পুনর্লিখন করতেই হবে। কেননা, বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধানের বৃহৎ দুর্বলতা হলো রাষ্ট্র ক্ষমতার ভারসাম্য। অর্থাৎ এখানে প্রধানমন্ত্রীকে এককভাবে এতটাই ক্ষমতাবান করা হয়েছে যে, তিনি চাইলে যা খুশি করতে পারেন এবং তার এই সাংবিধানিক ক্ষমতাই তাকে স্বৈরাচারে পরিণত করতে পারে। সেজন্য পুনর্লিখনে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক তা হলো, ১. একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। ২. একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান হতে পারবেন না। ৩. রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য থাকবে। রাষ্ট্রপতি হবেন নির্দলীয়। দলের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন বা আছেন এমন কেউ রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। ৪. বিচার বিভাগের যথাযথ সংস্কার করে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে এবং বিচার বিভাগকে আইন মন্ত্রণালয় থেকে অবমুক্ত করতে হবে। ৫. আইনপ্রণেতা বা সংসদ সদস্য হতে গেলে তাকে সংবিধান ও আইন-কানুন বুঝতে পারার মতো শিক্ষিত হতে হবে। ৬. নির্বাহী বিভাগের সাথে জনগণের চিন্তাগত দ্বন্দ নিরসনের ব্যবস্থা করে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। ৭. ধর্মীয় ইস্যুর সহজ সমাধান আবশ্যক। ৮. উপজাতিদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। ৯. সংখ্যালঘু ইস্যু বলতে কিছু থাকবে না। সকল জনগণ যাতে একইভাবে সমমর্যাদায় পরিচিত ও সুযোগসুবিধা ভোগ করতে পারেন সে লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ১০. সরকারি সিকিউরিটি বিষয়ক অফিস ব্যতিত অন্য সব বিষয়ের কার্যপ্রণালি জনগণের নিকট স্পষ্ট করে তুলে ধরতে হবে।
বিদ্যমান সংবিধান বহাল রাখলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানের ৭ (ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায় এই সংবিধান বা এর কোনো অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করলে কিংবা সেটি করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করলে তার এই কাজ রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে এবং ওই ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হবেন।’ সুতরাং, গণঅভ্যুত্থানের পর যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে সেটিও সংবিধানের কোথাও নেই। সুতরাং এমন অবস্থায় রাষ্ট্র সংস্কারের চাহিদা থেকে সংবিধান নতুন করে লেখার সুযোগ রয়েছে। তাতে কোন সাংবিধানিক সংকটও তৈরি হবে না। বরং সংবিধান সংশোধন করতে গেলে যতসব সংকট তৈরি হবে। বিদ্যমান সংবিধান এখনই বাতিল বা স্থগিত না করে সংবিধান বহাল থাকা অবস্থায় সেই সংবিধানকে মূল ধরে নতুন করে সবার মতামতের ভিত্তিতে পুনর্লিখন করা হলে এটি নিয়ে সংকট তৈরির কোন সুযোগ হবে না। এই মুহূর্তে সংবিধান পুনর্লিখন করতে হলে সব রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বা দেশের সর্বস্তরের মানুষের ঐক্যমত্য দরকার। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মত যদি থাকে তাহলে প্রশ্ন উঠলেও পরবর্তী নিয়ে সংকট তৈরি হওয়ার সুযোগ থাকবে না।

১৯৭১ এর প্রত্যাশা এবং ২০২৪ এর প্রত্যাশা একই। ১৯৭১ এর প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বিধায় ২০২৪ এর এই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। বিপুল প্রাণ ও অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীন দেশ পেয়েছিলাম, তাকে সমুন্নত রাখার জন্যই দ্বিতীয় বাংলাদেশ গঠনের প্রয়োজন। এ জন্য নতুনভাবে সংবিধান পুনর্লিখন করা যেতে পারে।

লেখক: আইনজীবী ও কলামিস্ট।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম
মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে কী পরিবর্তন আসছে?
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতদ্বৈততা কাম্য নয়
সচিবালয়ে আগুন সন্দেহজনক
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের যত্ন নিতে হবে
আরও

আরও পড়ুন

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

শুধু নারীদের জন্য

শুধু নারীদের জন্য

নিথর দেহ

নিথর দেহ

আত্মহননে

আত্মহননে

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম